Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বারি মরিচ-২ এর আধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি

মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে মূলত মরিচ মসলা ফসল হিসেবে পরিচিত। কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থাতেই এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিমানে কাঁচা মরিচ ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ। দৈনন্দিন রান্নায় রঙ, রুচি ও স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য মরিচ একটি অপরিহার্য উপাদান। আমাদের দেশে সাধারণত মরিচ ছাড়া কোন তরকারির রান্না চিন্তা করা যায় না। এছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য মরিচের সসের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া এর ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। প্রায় সব অঞ্চলেই এর চাষাবাদ হয়। তবে চরাঞ্চালে মরিচের উৎপাদন বেশি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন চর এলাকায় মরিচ প্রধান কৃষি ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মরিচের চাষ হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এদেশে রবি এবং খরিফ মৌসুমে মোট ১.০২ লাখ  হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় ১.০৩ লাখ মে.টন (শুকনা মরিচ)। গড় ফলন ১.২৭ টন/হে. (শুকনা মরিচ)। বাংলাদেশের অনেক কৃষক শুধুমাত্র মরিচ উৎপাদন করে জীবন নির্বাহ করে থাকে। বাংলাদেশে দুই ধরনের মরিচ চাষ হয়। যথা কম ঝাল বা ঝালবিহীন এবং ঝাল মরিচ। ঝালবিহীন মরিচ আচার, সবুজ সবজি এবং সালাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ঝালযুক্ত মরিচ মূলত প্রধান মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটা সরু ও লম্বা হয়। কেপসাইসিন নামক রাসায়নিক পদার্থের জন্য মরিচ ঝাঁঝালো হয় এবং কেপসানথিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থের জন্য মরিচ উজ্জ্বল ও লাল হয়।


মরিচের বিভিন্ন জাতের পরিচিতি
মরিচের অনেক স্থানীয় জাত আছে, কৃষকরা বাজারের চাহিদা ও স্থানীয় জাতের ফলনের ওপর জাত নির্বাচন করে থাকে। তবে মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি মরিচ-১ (বাংলা লংকা), বারি মরিচ-২ ও বারি মরিচ-৩ নামে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী  উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (মাগুরা, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, কুমিল্ল­া, রাজশাহী, নীলফামারী, ডোমার, পঞ্চগড়, পাবনা, জামালপুর ও লালমনিরহাটে) স্থানীয় জাতের পাশাপাশি সারা বছর ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। এছাড়াও দেশে বিভিন্ন হাইব্রিড মরিচ বীজ যেমন ঝিলিক, বিজলী ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়।


মসলা গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি মরিচ-২ এর বৈশিষ্ট্য
গাছ লম্বা, ঝোপালো ও প্রচুর শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। গাছ লম্বায়  ৮০-১১০ সেমি. এবং পাতার রং হালকা সবুজ। প্রতি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ৭.০-৭.৫ সেমি. ও ব্যাস ০.৭-১.০ সেমি, ওজন গড়ে ২.৫ গ্রাম, ১০০০ বীজের ওজন ৪.৫ গ্রাম, প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা ৪৫০-৫০০টি এবং ওজন ১১০০-১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এ জাতের গাছের মরিচের ত্বক পুরো, এটি গ্রীষ্মকালে চাষ উপযোগী জাত তবে সারা  বছর চাষ করা যায়। এ জাতটি মাঠে ২৪০ দিন পর্যন্ত (মার্চ-অক্টোবর) থাকে। তুলনামূলকভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। কচি অবস্থায় ফল হালকা সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় চকচকে লাল রঙের হয়। হেক্টর প্রতি সবুজ অবস্থায় ফলন ২০-২২ টন।


উৎপাদন প্রযুক্তি  
মাটি ও আবহাওয়া

মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। সাধারণত ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচের গাছের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ পচে যায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে-দো-আঁশ থেকে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম। মাটি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে ফুল ও ফল ঝরে পরে। মাটির ঢ়ঐ ৬-৭ হলে মরিচের ফলন ভালো হয়।

 

জমি তৈরি
শীতকালীন মরিচের জন্য প্রথমে জমিকে চারিদিক দিয়ে আইলের অতিরিক্ত অংশ কেটে নিতে হবে । তারপর ৪-৬টি এবং ট্রাক্টর গভীর চাষ দিতে হবে। জমিতে শেষ চাষের আগে একবার মই দিয়ে সমান করে আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে। জমি তৈরিতে শেষ চাষের আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর বেড তৈরি করতে হবে। বেড চওড়ায় ১ মিটার হলে ভালো হয়। তবে দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুসারে হলে ভালো হয়। বেডের উচ্চতা ১০-১৫ সেমি. হতে হয়। পাশাপাশি দুটো বেডের মাঝখানে ৫০ সেমি. প্রশস্ত এবং ১০ সেমি. গভীরতা বিশিষ্ট নালা পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার্থে রাখতে হয়।


মাটির অম্লতা দূর করা
ঢ়ঐ মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশি অম্লিয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমিতে ১-২ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লতা দূর করতে হবে।

 

উৎপাদন মৌসুম
বারি মরিচ-২ সারা  বছর চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমের জন্য ১-৩০ সেপ্টেম্বর ও খরিফ মৌসুমের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ মরিচ উৎপাদনের উপযুক্ত সময়।

 

বীজহার ও রোপণ পদ্ধতি
মরিচ সাধারণত দুই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যথা ঃ ১. সরাসরি ক্ষেতে বীজ বপন ২. বীজ হতে চারা তৈরি করে। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে বীজতলায় চারা তৈরি করলে ১-১.৫ কেজি/হে. বীজের প্রয়োজন হয়। আবার সরাসরি ছিটিয়ে মরিচ চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৬-৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে এ পদ্ধতি শুধু মাত্র রবি মৌসুমে অবলম্বন করা উচিত।

 

মরিচের বীজ শোধন
বীজতলায় বীজ বপনের আগে মরিচের বীজকে শোধন করে নিতে হবে এতে করে চারা অবস্থায় রোগ-বালাই কম হবে।
প্রোভেক্স জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রভেক্স-২০০ দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে
বীজ বপনের পূর্বে মরিচ বীজ ওপরে উল্লেখিত ছত্রাকনাশক দ্বারা ৩০ (ত্রিশ) মিনিট ভিজিয়ে রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট শুকাতে হবে
বীজশোধনের কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও শোধিত বীজ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বীজ শোধনের ফলে বীজ বাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

 

বীজ বপন
রোপণ পদ্ধতি : জমিতে বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পনিতে ভিজিয়ে রেখে, পানি থেকে উঠিয়ে হালকা ছায়াতে ২ গ্রাম/কেজি হারে প্রভেক্স মিশিয়ে শুকিয়ে ঝরঝরা করে মূল জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। মনে রাখা দরকার বীজ কোনো ক্রমেই ১-১.৫ সেমি. মাটির গভীরে যেন না যায়। বপনের সময় জমিতে পর্যপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বীজ বপনের ২-৩ দিন পর  হালকা করে সেচ দিতে হবে এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজাবে। সরাসরি ছিটিয়ে বপন করলে ১৫-২০সেমি.  পরপর গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।

 

চারা রোপণ
৩৫-৪০ দিন বয়সের সুস্থ চারা, ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (সারি-সারি) দূরত্বে, ও ৫০-৬০ সেন্টিমিটার (চারা-চারা) পরপর, ৩-৪ সেন্টিমিটার গভীর গর্তে ১টি করে রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর ২-৩ দিন চারার গোড়ায় হালকা পরিমাণে পানি দিতে হবে।
সার ব্যবস্থপনা ও প্রয়োগ পদ্ধতি : নিম্নোক্ত হারে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে-
চারা রোপণের ২৫, ৫০ এবং ৭০ দিন পর পর্যায়ক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় কিস্তিতে হেক্টরপ্রতি সার গাছের গোড়া থেকে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরে ছিটিয়ে ভিটির মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

 

শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, জিংক, বোরন এবং ১২৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া সার তিন  কিস্তিতে বীজ গজানোর ২৫, ৫০ এবং ৭৫ দিন পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত সকাল বেলা কিংবা বিকাল বেলা জমিতে সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি কিস্তি সার জমিতে সেচ দেওয়ার পর পানি বের করে দিয়ে অর্থাৎ জমিতে সেচ দেওয়ার পর যখন কোনো পানি জমিতে জমে না থাকে সে সময় সার প্রয়োগ করতে হবে। কারণ সেচের পর জমিতে সার প্রয়োগ করলে সার তাড়াতাড়ি মাটির সাথে মিশে যায়। এভাবে সার প্রয়োগ করলে সারের অপচয় কম হয়।
হরমোন প্রয়োগ

প্ল­­্যানোফিক্স নামক হরমোন প্রয়োগে দেখা গেছে মরিচের ফুল কম ঝরে এবং ফলন বাড়ে। এক মিলিলিটার প্ল্যানোফিক্স ৪.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে সব গাছের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। ফুল আসলে প্রথমবার এবং ২০-২৫ দিন পর দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হবে। এক হেক্টর জমিতে প্রায় ৫০০ লিটার মিশ্রণের প্রয়োজন হয়।
 

নিড়ানি
জমিতে আগাছার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নিড়ানি দিতে হবে। যদি আগাছা বেশি থাকে তাহলে নিড়ানি বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ জমিতে কোনক্রমেই আগাছা রাখা যাবে না।

 

পাতলাকরণ
বুনা মরিচের ক্ষেত্রে মরিচ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর ২-৩ ধাপে পাতলা করতে হবে। প্রতি মিটার এ ১২-১৫টি গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।

 

সেচ
মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা মরিচ সহ্য করতে পারে না আবার বেশি সেচ প্রয়োগ করলে গাছ লম্বা হয় ও ফুল ঝড়ে যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ৩/৪টি সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমাণমতো আর্দ্রতা রাখতে হবে।

 

মালচিং
সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে তাতে শিকড় প্রয়োজনীয় বাতাস পায় এবং গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

 

ফসল সংগ্রহ
মরিচের ফুল ফোটা, ফল ধরা ও রঙ ধারণ তাপমাত্রা, মাটির উর্বরতা এবং ভালো জাতের ওপর নির্ভর করে। উষ্ণ তাপমাত্রায় ফল তাড়াতাড়ি পাকে এবং ঠা-া তাপমাত্রায় ফল দেরিতে পাকে। মরিচ বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পর ফুল আসা শুরু করে। ফুল ধরার ১৫-২০ দিন পর ফল ধরা শুরু করে। ফল আসার ২০-২৫ দিন পর ফল পাকতে শুরু করে। চারা লাগানোর ক্ষেত্রে, চারা লাগানোর ৩৫-৪০ দিন পর গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল ধরে এবং ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে আরম্ভ করে। কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় মরিচ তোলা হয়। মরিচ বীজের জন্য গাছের মাঝামাঝি অংশ থেকে মরিচ সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। শুকনো মরিচের জন্য আধাপাকা মরিচ তুললে মরিচের রঙ ও গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফল লাল টকটকে হয়ে পাকলে সংগ্রহ করতে হবে। মরিচ সাধারণত রৌদ্রজ্জ্বল দিনে উত্তোলন করলে মরিচের গুণগতমান ভালো থাকে তাতে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। ফল উঠানোর সময় বোঁটার ওপরের অংশ এবং ফলের ওপরের অংশ অর্থাৎ বোঁটার কাছের অংশ ধরে ফল তুলতে হবে।

 

সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর সংগৃহীত মরিচ হতে আঘাত প্রাপ্ত, রোগাক্রান্ত, বিকৃত, কাঁচা, অর্ধপাকা ও সম্পূর্ণ পাকা মরিচগুলোকে আলাদা করে ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ ঘণ্টা হালকা ছড়িয়ে রাখতে হবে। কোনো ক্রমেই মরিচের বোঁটা ছাড়ানো যাবে না তাতে মরিচ অল্প সময়ের মধ্যেই তার সজীবতা হারিয়ে ফেলে ও পচে যায়। সূর্যালোকের সাহায্যে ফল শুকানো দেশের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু সতর্ক না হলে অতিরিক্ত সূর্য তাপে ফল সাদাটে রং এবং সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ফল পচা রোগ দেখা দেয়। এর পরে পাকা মরিচ পলিথিনে বা চাতালে বা পাকা মেঝেতে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশে শুকাতে হবে। শুকানোর সময় মরিচ পাতলা করে বিছিয়ে দিতে হবে। মরিচের আর্দ্রতা ১০-১২% এ পৌঁছলে উক্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হবে। শুকানো মরিচ ঝাকি দিলে ভেতরের বীজগুলো ঝনঝন শব্দ করলে বুঝতে হবে মরিচ ভালোভাবে শুকিয়েছে। সাধারণত সূর্যের আলোতে মরিচ শুকাতে ১০-১৫  দিন সময় লাগে।

 

বীজ সংরক্ষণ
সাধারণত জাতভেদে পাতলা ত্বক ও শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ কম এই জাতীয় মরিচ তাড়াতাড়ি শুকানো যায় কিন্তু পুরু মাংসল ত্বক বিশিষ্ট মরিচ শুকানো বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন। মরিচ শুকানোর  পরে ছায়াযুক্ত স্থানে ঠা-া করে সংরক্ষণ করতে হবে। ছয় মাস হতে এক বছর সময় পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য টিনের পাত্র, পলিথিন ব্যাগ, মাটির পাত্র, ডুলি বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। তবে দ্বিস্তর বিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ ও টিনের পাত্রের মধ্যে পলিথিন দিয়ে তার ভেতর মরিচ রাখলে মরিচের রঙ ও গুণগতমান ভালো থাকে। সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রৌদ্রে দিলে ভালো থাকে। মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মরিচের বোটা যেন মরিচ থেকে পৃথক না হয়ে যায় সে দিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে। বোঁটা মরিচ থেকে পৃথক হয়ে গেলে মরিচের বীজ বের হয়ে যায়। ফলে মরিচের ওজন ও ঝাঁঝ দুইই কমে যায় এবং মরিচের বীজের গুণগতমান হ্রাস পায়। সংরক্ষিত মরিচের মধ্যে কয়েক টুকরা চারকোল /কাঠের কয়লা রেখে দিলে মরিচ ভালো থাকে। এ ক্ষেত্রে চারকোল/কাঠের কয়লা অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। ফলে সহজে রোগ বা পোকার আক্রমণ হয় না।

 

রোগ ব্যবস্থাপনা
সাধারণত মরিচের রোগগুলোর জন্য দায়ী হল মাটি ও বীজের মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবাণু। নিম্নে মরিচের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ড্যাম্পিং অফ/গোড়া পচা/মূল পচা   
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- চারা অবস্থায় এই রোগ হয়।
রোগের কারণ - পিথিয়াম ও রাইজোকটোনিয়া (চযুঃযরঁস ধহফ জযরুড়পঃড়হরধ) নামক ছত্রাক দ্বারা ঘটে থাকে ।            
রোগের লক্ষণ- বীজ বপনের পর পরই বীজ পচে যেতে পারে অথবা চারা মাটি থেকে উঠার পরে চারা গাছ ফ্যাকাশে, লিকলিকে ও দুর্বল হয়। কচি চারায় গোড়ায় পানিভেজা দাগ পড়ে ও চারা ঢলে পড়ে মারা যায়।


দমন ব্যবস্থা- মরিচ বীজ প্রোভেক্স অথবা রিডোমিল গোল্ড @ ২.৫ গ্রাম/কেজি বীজ দ্বারা শোধন করে বপন  করতে হবে অথবা মরিচ বীজ ৫২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গরম পানিতে ৩০ মিনিট রেখে শোধন করে নিয়ে বপন করতে হবে। কুপ্রাভিট অথবা অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে ¯েপ্র করতে হবে।
ঢলে পড়া (ঋঁংধৎরঁস রিষঃ)


আক্রান্ত হওয়ার পর্যায় - মূল জমিতে চারা রোপণের পর মরিচ গাছের দৈহিক বৃদ্ধি অবস্থায় এই রোগ দেখা যায়।
রোগের কারণ-ফিউজারিয়াম অক্সিস্পোরাম (ঋঁংধৎরঁস  ড়ীুংঢ়ড়ৎঁস ভ.ংঢ়. পধঢ়ংরপর) নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে ।
রোগের লক্ষণ - প্রথমে গাছের নিচের দিকের কা-ে আক্রমণ করে এবং গাঢ় বাদামি ক্যাংকার সৃষ্টি করে কা-ের গোড়াকে চর্তুদিক হতে বেষ্টন করে। ধীরে ধীরে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক সময় মাটির উপরিভাগ বরাবর গাছের কা- কালো হয়ে ঢলে পড়ে। কা- লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভাসকুলার বান্ডল বিবর্ণ দেখা যাবে। রোগাক্রান্ত গাছ ১০-১৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ঢলে পড়ে।

 

দমন ব্যবস্থা-  
প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫ গ্রাম হারে প্রোভেক্স অথবা অটোস্টিন মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন  করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অটোস্টিন মিশিয়ে আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটিতে ¯েপ্র করতে হবে।
অ্যানথ্রাকনোজ/ ফল পচা - এ রোগ বীজের মধ্যে বসবাসকারী জীবাণু দ্বারা ঘটে থাকে।
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায় - এই রোগ সাধারণত বয়স্ক গাছে অর্থাৎ পাতা, ফল ও কা-ে আক্রমণ করে।
রোগের কারণ-কলিটোট্রিকাম ক্যাপসিসি(ঈড়ষষবঃড়ঃৎরপযঁস  পধঢ়ংরপর) নামক ছত্রাক এই রোগের জন্য দায়ী।
রোগের লক্ষণ - এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা, কা- ও ফল ক্রমশ ওপর হতে মরতে থাকে এবং গাছ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। ফল ও কা-ে গোল গোল কালো দাগ দেখা যায়। ফলের ওপর গোলাকার কালো বলয় বিশিষ্ট গাঢ় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং ইহা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ফলকে পচিয়ে দেয়। আক্রান্ত ফল ঝরে পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছ দ্রুত মরে যায়।

 

দমন ব্যবস্থা    
প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম অটোস্টিন দ্বারা শোধন করে বপন করতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে টিল্ট ২৫০ ইসি @০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে
পোকা ব্যবস্থাপনা
মরিচ গাছ প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকামাকড় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

 

এফিড বা জাব পোকা  
আক্রান্ত  হওয়ার পর্যায়- মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা
ক্ষতির ধরন-  সব ধরনের পাতার নিচের দিকে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা নিচের দিকে কুকড়ে যায় এমনকি এরা গাছের কা-েও আক্রমণ করে থাকে ফলে কা- শুকিয়ে মারা যায়।

 

দমন ব্যবস্থা
আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট) ¯েপ্র করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। আক্রমণ বেশি হলে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়ার ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি (ফাইফানন/সাইফানন) ১০ মিলি অথবা কুইনালফস ২৫ ইসি (করলাক্স/ একালাক্স/কিনালাক্স/ অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর) বা কেরাতে ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ০.৪ মিলি হারে ¯েপ্র  করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

 সাদা মাছি
আক্রান্ত হওয়ার পর্যায়- সাধারণত কচি চারা গাছ আক্রমণ করে।
ক্ষতির ধরন- কচি পাতার নিচে বসে রস শুষে খায় ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়।

 

দমন ব্যবস্থা-
আঠালো হলুদ/সাদা ফাঁদ ব্যবহার করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাবান-পানি ব্যবহার (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ডিটারজেন্ট) ¯েপ্র করে আক্রমণ কমানো সম্ভব। নিম বীজের নির্যাস (আধা ভাঙ্গা ৫০ গ্রাম নিম বীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে) ¯েপ্র করা। আক্রমণ বেশি হলে প্যাগাসাস অথবা ইনট্রিপিড (১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে) অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল (১০ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে) ¯েপ্র করা ।

 

 মাইট
আক্রান্ত  হওয়ার পর্যায়- মাইট মরিচ গাছের কচি ও বয়স্ক পাতা
ক্ষতির ধরন-  সাধারণত পাতার নিচের দিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিরার মধ্যকার এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায় এবং মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা সহজেই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। কচি পাতা মাকড় দ্বারা আক্রান্ড হলে পাতা নিচের দিকে মুড়ে গিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে নরম হয়ে যায়।

 

দমন ব্যবস্থা
আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মাকড়নাশক ওমাইট ৫৭ ইসি (প্রতি পানিতে ২.০ মিলি হারে) বা ভার্টিমেক ১৮ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলি হারে পাতা ভিজিয়ে ¯েপ্র করে মাকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। মাকড়নাশক পাওয়া না গেলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (কুমুলাক্স, থিওভিট ইত্যাদি) ¯েপ্র করে মাকড়ের আক্রমণ কমানো সম্ভব। মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে অতঃপর কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া, মোবা : ০১৭১১২৪৬৩৫২, মেইল :
dmnalam@yahoo.com

 

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon